দুপুর প্রায় ৩.৩০হবে। রাস্তার পাশেই চেনা একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম।এমন সময় একটি মেয়ে, বয়স ২২-২৩এমনটা হবে,মেয়েটা ভিশন তারাতাড়ি দোকানে ঢুকলো।মেয়েটার হাতে একটা ফাইল ছিলো।ফাইলের ভিতরে কিছু মার্কশিট,সার্টিফিকেট এই সব দেখা যাচ্ছে। সারা শরীরে প্রসাধনের বিন্দুমাএ চিহ্ন না থাকলেও ঘাম আর রোদমাখা মেয়েটার মুখটা বেশ মায়াময় ছিল। দোকানেরর সাথে মেয়েটার কিছু কথা….
মেয়ে -দাদা,এখানে ভাত বা রুটি কিছু পাওয়া যাবে?
দোকানদার-হ্যা, আফা ভাত পাবেন,কি কি খাবেন বলুন?ডাল, ডিম, রুইমাছ, সবজি,বোয়ালমাছ, মুরগির মাংস, গরুর মাংস।
মেয়ে-এমনি শুধু ডাল আর ভাত কতো টাকা?
দোকানদার -ভাত,ডাল ও ডিম ৩৫ টাকা।
মেয়ে -আমায় শুধু ভাত আর ডাল দিন আর কিছু লাগবে না। ৩০টাকায় হয়ে যাবে তো?
দোকানদার -আচ্ছা আফা আপনি বসুন, আমি খাবার নিয়ে আসছি।হঠাৎ মেয়েটার ফোন কাল আসলো।
মেয়ে -হ্যা বাবা বলো!
হ্যাঁ ইন্টারভিউটা ভালো দিয়েছি। হ্যাঁ খেয়েছি। মাছ, সবজি, ভাত।তুমি ওষুধগুলো খেয়েছো তো? ,হ্যাঁ আমি ৬টা ট্রেনটা ধরবো। আচ্ছা ভাইকে টিউশন থেকে ফেরার পথে স্টেশনে দাঁড়াতে বলবে….আচ্ছা রাখো।ফোনটা কেটে দিয়ে মেয়েটা কিছুক্ষণ বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে।হয়তো অসুস্থ বাবা…ছোট ভাইয়ের সুদিন এনে দেওয়ার সাজানো স্বপ্ন মেয়েটার চোখে ভিড় করছিলো।এটাই নির্মম বাস্তবতা
মেয়েটাকে দেখেই শ্রদ্বা শ্রদ্বা ভাব চলল এলো..একটা অজানা অচেনা মেয়ের জন্য।
নারী স্বাধীনতা কি?মেয়েটার কাছ থিকে শুনতে ইচ্ছে করছিলো। মনে মনে মেয়েটাকে শুভকামনা জানালাম। এই চাকরির আকালের যুগে হে বালিকা তুমি যে বাইরে এসে আগুন রোদের তলায়,শক্ত মাটিতে নেমে এসেছো যুদ্ধের জন্য, এখানেই তুমি যুদ্ধটা অর্ধেক জয়ী হয়েছো,আর বাকী টা তুমি নিজের চাকরির টাকায় মাছ, ভাত খেয়ে জয়ী হবে। মেয়েটা মনটাকে জিতে নিয়ো।
দোকানদার খাবারের থালাটা নিয়ে মেয়েটির সামনে রেখে বললো,
আফা আমি ভুল করে ডিমটা দিয়ে ফেলেছি।আপনি খেয়ে নিন আফা।
আপনি আমাকে ওই ৩০টাকাই দিয়েন।
মেয়ে-আমি তো শুধু ডাল আর ভাত ‘ই…..
দোকানদার -আমি ভুলেই ডিমটা আপনাকে দিয়ে ফেলেছি, আপনি খেয়ে নেন প্লিজ..আপনি আমাকে ৩০টাকাই দিয়েন,,আমার ভুল,, আপনি ডিমটা না খেলে নষ্ট হতো তাই আপনাকে দিয়েছি আফা, আপনি খান।
মেয়েটার মতো আমিও ভেবেছিলাম দোকানদার হয়তো ভুলেই দিয়েছে, চায়ের বিল দেওয়ার সময় দোকানদার ‘কে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি সত্যি ভুল করে খাবার টা দিয়েছিলেন?
দোকানদার আস্তে আস্তে কানের কাছে এসে বললো, ” শুধু ব্যবসায় লাভ খুঁজলেই হবে দাদা,এরকম ভুল করে যদি কাউকে একটু ভালো খাওযাতে পারি। আমি বুঝতে পরেছিলাম মেয়েটার ভিশন খিদে লাগছে।আমারও একটা বোন আছে বয়সটা এরকমি প্রায়। এই কথা বলে আবার নির্লিপ্ত মুখে চা, সিগারেট, ভাত, তারকারির রাজ্য হারিয়ে যায়।
আমি বুঝতে পারলাম না, কার জন্য বেশি ভালো লাগা উচিৎ আমার! মেয়েটার নাকি দোকানদারের। তবে একটা কথা…যে ব্যক্তি যুদ্ধ নামক জিনিসটার মূল্য বোঝে,সেই ব্যক্তিই যোদ্ধার ঘাম,ক্ষুধার মূল্য দিতে জানে। এটাই নির্মম বাস্তবতা